নারীদেহের অদৃশ্য শত্রু – সারভিক্যাল ক্যান্সার

জরায়ুর মুখে ক্যান্সার (Cervical Cancer): কারন, প্রতিরোধ এবং প্রতিকার

জরায়ুর মুখে ক্যান্সার বা Cervical Cancer নারীদের জন্য একটি ভয়াবহ ব্যাধি এবং জরায়ুমুখ ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী নারীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ।মহিলাদের ক্যান্সারের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সারের পরের স্থানে জরায়ু- মুখের ক্যান্সারের স্থান দ্বিতীয় (১৭.৯%)। বছরে ৪ হাজার ৯৭১ জন নারী জরায়ু মুখের ক্যান্সারে মারা যাচ্ছেন। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসকে (এইচপিভি) জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়। ১০০টিরও বেশি প্রজাতির এইচপিভি আছে। এর মধ্যে দুই ধরনের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের কারণে এই ক্যান্সার হয়ে থাকে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

সার্ভিকাল ক্যান্সার কি?

সার্ভিকাল ক্যান্সার হল এক ধরনের ক্যান্সার যা জরায়ুর কোষে ঘটে — জরায়ুর নীচের অংশ যা যোনির সাথে সংযোগ করে।

হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) এর বিভিন্ন স্ট্রেন, একটি যৌন সংক্রমণ, বেশিরভাগ জরায়ুর ক্যান্সার সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করে।

সার্ভিকাল ক্যান্সারের টাইপ

সার্ভিকাল ক্যান্সারের টাইপ দুইটি-

Squamous Cell Carcinoma- স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা। এই ধরনের জরায়ুর ক্যান্সার জরায়ুর বাইরের অংশে আস্তরণযুক্ত পাতলা, সমতল কোষ (স্কোয়ামাস কোষ) থেকে শুরু হয়, যা যোনিতে প্রবেশ করে। বেশিরভাগ সার্ভিকাল ক্যান্সার হল স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমাস।

Adenocarcinoma- অ্যাডেনোকার্সিনোমা। এই ধরনের সার্ভিকাল ক্যান্সার শুরু হয় কলাম আকৃতির গ্রন্থি কোষে যা সার্ভিকাল খালের সাথে থাকে।

সার্ভিকাল ক্যান্সার হওয়ার কারণ

জরায়ুর মুখের ক্যান্সার হওয়ার প্রধান কারন হচ্ছে হিউম্যান পেপিলমা ভাইরাস। এই ভাইরাসের কারণে ৯০% ক্ষেত্রে মানুষ এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। ভাইরাসের প্রতিরোধ হিসেবে ভ্যাক্সিন রয়েছে। বাকি রিস্ক ফ্যাক্টরের জন্য রেগুলার চেকআপের মধ্যে থাকা হবে, বিশেষ করে ৪০ ঊর্ধ্ব মহিলাদের। 

সার্ভিকাল ক্যান্সার হওয়ার রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো কী?

১) অল্প বয়সে শারীরিক সম্পর্কে যাওয়া

২) অল্প বয়সে বাচ্চা নেয়া

৩) কোন ব্যক্তির পূর্বের স্ত্রীর এই রোগ হয়ে থাকলে, তার সাথে যৌন মিলন করা

৪) একাধিক ব্যক্তির সাথে যৌন মিলন করা

৫) ঘন ঘন বা অধিক বাচ্চা নেয়া

৬) ইনফেকশন – এইচ.আই.ভি., হিউম্যান পেপিলমা, ক্লামাইডিয়া ভাইরাসে ইনফেকশন

সার্ভিকাল ক্যান্সার হওয়ার লক্ষণসমুহ

আর্লি স্টেজে কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এই রোগের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ গুলো হচ্ছে –

১) যোনিপথে রক্তপাত, সহবাসের সময় রক্তপাত বা কন্টাক্ট -এ অর্থাৎ কোন কিছুর স্পর্শে রক্তপাত

২) যোনিপথে দুর্গন্ধযুক্ত নিঃসরণ

৩) জরায়ু মুখের ক্যান্সার হওয়ার লক্ষণ তলপেটে ব্যথা

৪) কাশি, কাশিতে রক্ত আসা

৫) ডায়রিয়া, পায়খানার সাথে রক্ত আসা, প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া

৬) রক্ত শূন্যতায় ভোগা

৭) ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুধা মন্দা, শরীর অবসন্ন লাগা

৮) পিঠে ব্যথা, পায়ে ব্যথা ও পা ফুলে যাওয়া

৯) অতিরিক্ত সাদাস্রাব,

১০) অসময়ে বা মাসিক বন্ধ হওয়ার পরও রক্ত যাওয়া।

সার্ভিকাল ক্যান্সার প্রতিরোধ

১) ভ্যাক্সিন- ১০ বছরের পর থেকেই জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধক ভ্যাক্সিন নেওয়া যায়। একবার ক্যান্সার হয়ে গেলে ভ্যাক্সিন কোন কাজে আসে না। তিনটি ডোজ আছে। প্রথমটির এক মাস পরে দ্বিতীয় টিকা এবং তারও পাঁচ অর্থাৎ প্রথমটির ছয় মাস পরে তৃতীয় ডোজের টিকাটি নিতে হবে।

২) রেগুলার চেক-আপ-  রেগুলার চেক-আপে pap smear নামে একটি টেস্ট আছে, আপনার জরায়ু মুখে ক্যান্সার জনিত কোন পরিবর্তন হলে ডিটেক্ট করা সম্ভব। এটি একটি স্ক্রিনিং টেস্ট। প্রতি ৩-৫ বছরে একবার করানো ভালো। ২১ বছরের পর থেকেই করা যায়। ৪০ বছরের পর থেকে নিয়মিত করা উচিত, ৫০ এর পর থেকে বছরে একবার করালে আরও ভালো।

৩) শারীরিক সম্পর্কে সচেতন হওয়া- শারীরিক সম্পর্কে কনডোম ব্যবহার করুন, এতে কোন রকম ইনফেকশন হওয়ার রিস্ক কমে আসবে।আশা করি আজকের আর্টিকেলটি হেল্পফুল ছিল। সার্ভিকাল ক্যান্সার নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে Lilacforyou.com- এ ইনবক্স করতে পারেন। আবার ডাক্তারের সাথেও কথা বলতে পারেন। স্বাস্থ্যবিষয়ক আরও তথ্য জানতে আমাদের আরও আর্টিকেল লিখা আছে।

Shopping Cart

Home