“হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্ত চাপ বা হাইপারটেনশন” নিজের নিয়ন্ত্রনে আনুন।
অনেক সময় দেখা যায়, ঘাড় অনেক ব্যথা করছে, বা অতিরিক্ত ঘাম হচ্ছে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে অথবা মাথা ঘুরছে- তখনই বুঝতে পারি আমাদের প্রেসার হয়তো উঠা-নামা করছে। প্রেসার মাপার পর যদি দেখি ৯০ থেকে ১৪০ তাহলেই বুঝতে হবে আপনার হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্ত চাপ বা হাইপারটেনশন রোগে ভুগছে। আসলে উচ্চ রক্তচাপ কি তা আমাদের অনেকেরই পরিষ্কারভাবে কোন ধারণা নেয়। ধারণা থাকলেই কিন্তু “নিয়ন্ত্রন কীভাবে করবো, কি পন্থাগুলো মেনে চললে নিয়ন্ত্রনে থাকবে বুঝে উঠতে সুবিধা হবে”। আজকের আর্টিকেলটি হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্ত চাপ বা হাইপার টেনশন নিয়ে বিস্তারিত কথা।
কীভাবে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয়?
আমাদের শরীরের রক্তনালীগুলো রাবারের মত। প্রয়োজনমত সংকোচন বা প্রসারিত হয়। রক্তনালী যখন শক্ত হয়ে যায়, ঠিকমত সংকোচন বা প্রসারিত হতে পারে না, রক্ত চলাচলে দেখা দেয় বাঁধা, তখনই দেখা দেয় উচ্চ রক্তচাপ।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ কি কি?
উচ্চ রক্তচাপের জন্য যেহেতু কোন রকম ব্যথা হয় না বা কোন অসুবিধাহ সৃষ্টি করে না বা অনেকেই লক্ষণগুলো ঠিকমত জানেল না। তাই লক্ষণগুলো জেনে নিতে হবে-
(১) মাথাব্যথা।
(২) চোখে ঝাপসা দেখা।
(৩) বমির ভাব।
(৪) একটুতেই টায়ার্ড হয়ে যাওয়া।
(৫) ঘাড় ব্যথা করা।
(৬) হঠাৎ করে অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া।
(৭) অবচেতন হয়ে যাওয়া।
(৮) নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
(৯) হাত পা অবোশ হয়ে যাওয়া।
উচ্চ রক্তচাপের জন্য কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে?
যেহেতু উচ্চ রক্তচাপের জন্য কোন রকম ব্যথা হয় না বা অনেক সময় কোন অসুবিধাহ সৃষ্টি হয় না, তাই অনেকেই এইটাকে সহজভাবে নিয়ে থাকে। দেখা যায়, আজকে ডাক্তারের কাছে যাব, কাল যাবো এই করে করে অবহেলা করে থাকে। ফলে হটাৎ করেই উচ্চ রক্তচাপের জন্য বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
(১) উচ্চ রক্তচাপের জন্য রক্তনালী পাতলা হয়ে যায়, নালীর দেয়ালগুলো ফুলে যেতে পারে। তখন নালীগুলো ফেটে ব্রেইনে রক্তক্ষরণ দেখা দিতে পারে।
(২) অনেক সময় রক্তনালীতে চর্বি জমে যায়। উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালীকে দুর্বল করে দেয়, ফলে সহজেই চর্বি, ক্যালসিয়াম, কোলেস্টেরল জমতে থাকে। আসতে আসতে চর্বি বড় হয়, রক্তনালী সরু হয় বা রক্তে চর্বি জমে যায়। রক্তের তখন স্বাভাবিক চলাচলে নিয়ণতরণ হারিয়ে ফেলে। তখনই কিন্তু ব্রেইন স্ট্রোক বা হার্ট এট্যাক হয়ে থাকে।
বড় বড় ব্যাধির পাশাপাশী কিন্তু ছোট ছোট অনেক সমস্যাও দেখা দেয়।
কিভাবে পাবেন সমাধান?
উচ্চ রক্তচাপের সমাধানটা কিন্তু আমাদের নিজেদের হাতেই। খাবার-দাবার, লাইফ-স্টাইল মেইনটেইন করলেই কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ আপনার কন্ট্রোলে থাকবে।
কি খাওয়া যাবে না-
· লবণঃ লবণে থাকে সোডিয়াম, যা ব্লাড প্রেসার বাড়ায়। দিনে পোনে এক চা চামচের বেশি লবণ খাওয়া যাবে না। মানে তরকারী থেকে শুরু করে ভাতের সাথে লবণ নিলেও এই পরিমাণের ভিতরেই থাকা লাগবে। কোন ফলের সাথেও লবণ মিক্সড করে খাওয়া যাবে না। অনেকেই লবণ ভেজে খায়, ভাবে এতে ক্ষতি কম হয় বা হয় না। ধারণাটা কিন্তু একদম ভুল। কাচা বা ভাঁজা দুই রকমের লবণই কিন্তু শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া সামুদ্রিক কিছু মাছ যেমন- চিংড়ি মাছে প্রাকৃতিক লবণ থাকে বা প্রাকৃতিক কিছু খাবারে লবণ থাকে; এই ধরণের খাবারগুলো পরিমাণে কম খাবেন।
· টমেটো সস বা বিভিন্ন রকম সস- এইসব এড়িয়ে চলুন। টমেটো সসে যেমন লবণ থাকে, তেমনি চিনিও থাকে; যা ব্লাড প্রেসারের জন্য ভালো না।
· তেল, চর্বি বা ফ্যাটঃ তেল, চর্বি বা ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। সব মিলিয়ে দিনে ৩চা চামচের বেশি তেল খাওয়া যাবে না। তাছাড়া মাংসের চর্বি, মাখন, ঘি, দুধের সড় বা ফুল ফ্যাট দুধ, খাওয়া যাবে না।
· সুগারঃ চিনিকে কিন্তু শরীরের জন্য বিষ বলা হলেও আমরা সুস্থ মানুষরাও এই চিনিকে এড়িয়ে চলতে পারি না। শরীরে রোগ বাধার একটি কারনই কিন্তু হয়ে দাঁড়ায় এই চিনি। হাই ব্লাড প্রেসারের রোগীর জন্য তো চিনি মারাত্মক ক্ষতিকারক। তাই যতকরম চিনি জাতীয় খাবার খাবেন না।
কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবে-
· পটাসিয়ামযুক্ত খাবারঃ বেশি বেশি ফল,সবজি খেতে হবে। ফ্যাট ফ্রি দুধ বা টক দই প্রতিদিন খেতে হবে।
ব্যায়ামঃ প্রতিদিন খাওয়া দাওয়ার সাথে কিন্তু ৪৫মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম করতে পারেন। এতে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমবে না। শরীরও ভালো থাকবে।
হঠাৎ প্রেসার বেড়ে গেলে কি করবেন?
যদি প্রেসার ১৪০ এর উপর উঠে যায়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাথায় ঠাণ্ডা পানি ঢালুন বা বরফ দিন। আর রোগীকে স্থির করে কোথাও বসান বা শুয়ে দিন। কিছুক্ষণের মধ্যে যদি প্রেসার না কমে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালের রোগীকে নিয়ে যান।
তেতুল খেলে কি প্রেসার কমে?
প্রেসার হঠাৎ বেড়ে গেলে অনেকেই তেতুল বা এর শরবত খাওয়ান। কিন্তু তেতুল খেলে প্রেসার কমে না। কিন্তু দীর্ঘদিন তেতুল খেলে প্রেসার নিয়ন্ত্রনে থাকে। কারন তেতুল এক ধরণের ফল।
কারা আছেন ঝুঁকিতে: মাত্রাতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি, ধূমপায়ী এবং যাঁরা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন, তাঁদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি।
মনে রাখুন
হাই ব্লাড প্রেসার হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। ডাক্তারের কথা ছাড়া কোন মতেই ওষুধ বন্ধ করা যাবে না। হঠাৎ দেখলেন প্রেশার নিয়ন্ত্রনে আছে, ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিলেন। এতে হঠাৎ করেই দেখবেন প্রেসার বেড়ে গিয়েছে, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মত এক্সিডেন্ট হতে পারে। তাই রেগুয়ালার প্রেসার মাপার জন্য বাসাতেই পারলে একটি মেশিন কিনে রাখুন এবং ডাক্তারের চেকাপেও থাকুন।
আমি আশা করি আজকের আর্টিকেলটি সবার জন্য উপকারে আসবে। আপনার বা আপনার পরিবারের কারো হয়তো প্রেসার নেই, কিন্তু এই সম্পর্কে ধারণা থাকলে হঠাৎ উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ দেখা দিলে সময়মত নিজের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন। আর্টিকেলটি উপকারী মনে হলে নিজের পরিবার ও আপনজনের সাথে শেয়ার করুন, এতে অন্য একজন উপকৃত হবে। আজকে এই পর্যন্তই। আপনার সুস্থতা কামনা করি।