সন্তান জন্ম নেয়ার পর মায়ের বিষন্নতা (পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশন)
বর্তমানে নারীদের মধ্যে মানসিক অসুস্থতা বাড়ছে। প্রতি ৫জন নারীর মধ্যে একজন খুব সাধারণ একটি মানসিক ব্যাধিতে ভুগছে। যেমনঃ উদ্বেগ বা বিষন্নতা। আর যেখানে পুরুষদের মধ্যে প্রতি ৮জনে ১জন মানসিকভাবে অসুস্থ হচ্ছে।
বিভিন্ন কারণেই এই ডিপ্রেশন বেড়েই যাচ্ছে। পারিবারিক সমস্যা, বাইরে কাজের প্রেশার, কোন একটা ট্রমাও কারন হতে পারে। সব থেকে অবাক করার বিষয় হচ্ছে- একজন নারী যখন শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়, তখন মানসিকভাবেও সে বিপর্যস্ত থাকে। ২০২২ সালে আমরা এখনো এই নরমাল ব্যপারটা বুঝে উঠতে পারি না। প্রেগন্যান্সিতে বা প্রেগন্যান্সির পরবর্তী সময়ে বিশেষ করে। এই সময়টাকে পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশন বলে। আজকের আর্টিকেল পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশন নিয়ে।
পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশন কি?
পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশনে ফিজিক্যাল, মেন্টাল এবং আচরণগত পরিবর্তনের একটি মিশ্রন যা বাচ্চা জন্মের পর একজন নারীর মধ্যে প্রকাশ পায়। পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশন একটি মারাতক ডিপ্রেশন যা বাচ্চা জন্মের ৪-৫দিন থেকে শুরু হয়। এই সময়কে “বেবি ব্লুস”-ও বলা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নতুন মায়েরা পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশনে ভুগে থাকে। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে সময়ের সাথে সাথে ডিপ্রেশন ভয়ানক রূপ নেয়। সময়মত পিপিডি মেডিসিন গ্রহন করে বা কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে রিকভার ইজিলি করতে পারেন।
কেন পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশন হয়?
বাচ্চা জন্ম নেয়ার ফলে একজন নারীর শরীরে ক্যামিকেল, ফিজিক্যাল অনেক চেইঞ্জ আসে। ক্যামিকেল চেইঞ্জের জন্য হরমোন দ্রুত চেইঞ্জ হতে থাকে। প্রেগন্যান্সির সময় ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরনের মাত্রা দশগুণ বৃদ্ধি পায়। তারপরে, বাচ্চা হওয়ার পরে তারা দ্রুত হ্রাস পায়। বাচ্চা জন্মের ৩ দিন পরে, এই হরমোনের মাত্রা গর্ভাবস্থার আগে যা ছিল তা ফিরে আসে। ফলে একজন মা খুব দ্রুত ডিপ্রেশনে পড়ে যায়।
কি কি লক্ষণ দেখা দেয়?
- · ঘুমের সমস্যা,
- · ক্ষুধা কমে যাওয়া,
- · টায়ার্ড হয়ে যাওয়া,
- · সহবাসের প্রতি আগ্রহ কমে আসা,
- · মুড সুইং
যখন ডিপ্রেশন মারাত্মক আকারে ধারন করে এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।
- · মায়ের বাচ্চার প্রতি আগ্রহ কমে যায়,
- · কোন কারন ছাড়ায় সারাদিন কান্না পাওয়া,
- · সব সময় মন খারাপ থাকা,
- · একটুতেই রেগে যাওয়া,
- · কোন কিছুতে আনন্দ খুঁজে না পাওয়া,
- · বার বার নিজেকে অসহায় মনে করা,
- · কোন কাজে ফোকাস করতে না পারা।
১% থেকে ৩% মায়ের এই লক্ষণগুলো দেখা দেয়। এই লক্ষণগুলো ডাক্তারের হেল্প ছাড়া রিকভার করা কষ্ট হয়ে অনেক সময় প্যানিক এট্যাক হয়ে থাকে। লক্ষণগুলো ২ সপ্তাহের বেশী দেখলেই কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক। আর এই কন্ডিশন কিন্তু একজন মায়ের জন্য যতটা খারাপ ঠিক ততটাই শিশুর জন্যও খারাপ।
বাবারাও কি পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশন ফেইস করে?
হ্যাঁ, একজন বাবাও পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশনে ভুগতে পারে। নতুন মা এবং শিশুর প্রতি খেয়াল রাখতে হয়, সাথে নতুন পরিবেশে নিজেকে গুছিয়ে উঠতে অনেকের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। সেই সাথে ফিনান্সিয়াল প্রেসারও নিতে হচ্ছে।
কীভাবে পোস্ট ডিপ্রেশন থেকে বের হয়ে আসবেন?
- · সম্ভব হলে বাচ্চার এবং নিজের খেয়াল রাখতে অন্যদের সাহায্য নিন।
- · একটু হাঁটা চলা করুন, প্রয়োজনবোধ করলে বাইরে ঘুরে আসুন।
- · হেলথি ডায়েট চার্ট ফলো করুন।
- · ফ্যামিলি এবং ফ্রেন্ডদের সাথে সময় কাটান।
- · হসপিটাল থেকে বাসায় আসার পর যতটুকু সম্ভব বিশ্রাম নিন।
- · বাচ্চা যখন ঘুমায় নিজেও ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
নতুন শিশুর আগমন বাবা-মায়ের দুই জনের জন্যই যাতে আনন্দদায়ক হয়। ডিপ্রেশন যাতে কাঁটিয়ে উঠতে পারেন, প্রয়োজনীয় স্টেপ নিন। স্বাস্থ্য এবং মানসিক প্রয়োজনীয় পরামর্শের গ্রহনের জন্য লাইলাকের সাথেই থাকুন।
Leave a Reply